লিনাক্স – অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে একটি পর্যালোচনা-১

লিনাক্স নিয়ে এমন একটি ভাবনার সূত্রপাত আমার মাঝে হঠাৎ করে হয়নি। বিভিন্ন ফোরামে উইন্ডোজ ভক্তগন মাঝে মাঝে উইন্ডোজ এর পক্ষ অবলম্বন করে হঠাৎ হঠাৎ পোস্ট দিয়ে থাকেন এবং তার পক্ষে বিপক্ষে আলোচনার ঝড় চলতে থাকে বেশ কয়েকদিন ধরে। কোন কোন সময় মনে হয় এগুলির উত্তর দেব। কিন্তু লোভটাকে সম্বরন করে নেই। কারন কোন সিস্টেম সম্পর্কে ভালভাবে না জানলে বা কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলে এ ধরনের মন্তব্য করা খুব স্বাভাবিক।

প্রথমেই আসুন একজন সাধারন ব্যবহারকারী কি কি কাজে কম্পিউটার ব্যবহার করেন তার একটি লিস্ট তৈরী করি।

১. সাধারন এপ্লিকেশন চালানো- যেমনঃ এম.এস.ওয়ার্ড, এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্ট
২. মাল্টিমিডিয়া সংক্রান্ত বিনোদন উপভোগ করা - যেমনঃ গান শোনা, মুভি দেখা, গেম খেলা
৩. নেটওয়ার্কিং ও ইন্টারনেট সংক্রান্ত কাজ করা- ফাইল ও ফোল্ডার শেয়ারিং করা, ব্রাউজ করা, ডাউনলোড করা, ইমেইল করা ইত্যাদি।

একটু অগ্রসর ব্যবহারকারীদের তালিকায় থাকে আরো কিছু সফটওয়্যার যেমনঃ এডোবি ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর, মায়া, এডোবি প্রিমিয়ার, অটোক্যাড ইত্যাদি বিশেষায়িত সফটওয়্যার সমূহ।

উপরে যে তালিকাটি দিয়েছি তা মূলত একজন সাধারন ব্যবহারকারীর কথা মাথায় রেখেই দেয়া হয়েছে।

অপারেটিং সিস্টেম মূলতঃ পুরো কম্পিউটারকে নিয়ন্ত্রন করে থাকে। তাই শুধুমাত্র উপরের তালিকাটি যে এটির জন্য যথেষ্ট নয় সেটি বোঝা যে কারো পক্ষেই সহজ।

পৃথিবীতে যাবতীয় টেকনোলজির দুটি দিকের ব্যবহারকারী রয়েছে-
১. একদল উক্ত টেকনোলজি থেকে সুবিধা গ্রহন করে থাকে
২. আরেকদল উক্ত টেকনোলজিকে উত্তরোত্তর সমৃদ্ধ করতে থাকে- অর্থাৎ উদ্ভাবন, গবেষনা, পরিবর্তন, পরিবর্ধন এ ধরনের কাজ করে থাকে এ দলটি।

উদাহরনস্বরূপ- ওষুধের কথাই ধরুন। ওষুধ কোন গবেষক তৈরীর পর তা মানুষের ব্যবহার উপযোগী হলে সবার জন্য বাজারে ছাড়া হয়ে থাকে। তারপর রোগাক্রান্ত মানুষ তার সুস্থতার জন্য সেটি কিনে তার প্রয়োজন মিটিয়ে থাকে।

এখন উপরোক্ত ওষুধ যদি তৈরীই না হত তাহলে মানুষ কি তা থেকে উপকৃত হতে পারতো? আবার যদি এ ওষুধ তৈরী করা ও গবেষনার কাজ যদি একটি কোম্পানির হাতে কুক্ষিগত থাকে তবে মানুষ কি ঐ কোম্পানির কাছে অসহায় হয়ে যাবে না? আবার ওষুধ তৈরীর ফর্মূলাটি যদি সবার জন্য উম্মুক্ত না থাকে তবে তা একটি ভয়ের কারন ও বটে। কারন নিত্য নতুন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ার সামনে উক্ত ওষুধটি তার কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে। তাই ওষুধের ফর্মূলাটি সবার সামনে উম্মুক্ত থাকলে তা নিয়ে গবেষনা করা, পরিবর্তন করা, পরিবর্ধন করা অনেক সহজ হবে।

আবার ভাবুন- এ সমস্ত কষ্টকর কাজ যারা করেন তাদেরকে যদি অন্যরা উপহাস করেন যে তোমরা এ ধরনের ফালতু কাজে সময় নষ্ট করো কেন? বাজারে ভাল পন্য তো রয়েছে। সেগুলিই তো যথেষ্ট।

উপরের কথাগুলি বলার কারন হচ্ছে - উম্মুক্ত সোর্স এর মান যেমনই হোক না কেন তাকে নিয়ে উপহাস করার কিছু নেই। যারা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষনা করবেন তাদের জন্য এর কোন বিকল্প নেই। ক্লোজড সোর্স প্রোগ্রামের কোড তারা কিভাবে দেখবেন ও শিখবেন? ডাটাবেজ সম্পর্কে ধারনা নিতে হলে ওরাকল এর চেয়ে মাইএসকিউএল কি বেশী ভাল নয়?

এবার বলা যাক অপারেটিং সিস্টেমের বহুমাত্রিক ব্যবহার নিয়ে। উপরে বর্নিত সাধারন ব্যবহারকারীদের কাজ ছাড়াও কম্পিউটার বহু ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেমনঃ

১. প্রোগ্রামিং করা- বিভিন্ন টুলস যেমন- সি++, ডেলফি, জাভা, পাইথন ইত্যাদে ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়ে প্রোগ্রামিং সমস্যা সমাধান।
২. ওয়েব সার্ভার সেট আপ করা
৩. নেটওয়ার্ক সেবা প্রদান
৪. সিকিউরড রিমোট এ্যাডমিনিস্ট্রেশন
৫. শক্তিশালী রাউটার ও গেটওয়ে তৈরী
৬. ডাটাবেজ সার্ভার সেটআপকরন
৭. এফটিপি সার্ভার সেটআপ
৮. ইমেইল সার্ভার সেটআপ
৯. মেইল ফিল্টারিং বা স্প্যাম নিয়ন্ত্রন
১০. ব্যাকআপ সার্ভার সিস্টেম
১১. ভার্চ্যুয়ালাইজেশন
১২. সুপার কম্পিউটার সিস্টেম তৈরী বা ক্লাস্টারিং
১৩. ডেটা সুরক্ষায় একাধিক হার্ডডিস্কের সমন্বয়ে রেইড ডিভাইস তৈরী

এখন কেউ যদি বলেন উপরোক্ত কাজগুলি গান শোনা আর গেম খেলা থেকেও কম গুরুত্বপূর্ন তাহলে আসুন তাদের জন্য কিছু উদাহরন দেয়া যাক।

গেম খেলবেন ভাল কথা কিন্তু ওয়েবসাইট ব্রাউজ না করলে কি চলবে আপনার? যদি না চলে তবে জেনে রাখুন পৃথিবীতে বেশীরভাগ ওয়েব সার্ভার চলে লিনাক্সে। অর্থাৎ লিনাক্স না থাকলে বিশ্বের অধিকাংশ আকর্ষনীয় ওয়েবসাইট আপনি পেতেন না। আর এ ওয়েব সার্ভার নিজের জন্য বানাতে চাইলে লিনাক্স কিন্তু আপনাকে শিখতেই হবে গেম খেলার পাশাপাশি। আপনার এক্সপি/ভিস্তা/সেভেন দিয়ে কি এরকম শক্তিশালী ভাইরাস প্রুফ ওয়েব সার্ভার বানাতে পারবেন যা মাসের পর মাস রিবুট ছাড়াই চলতে সক্ষম।

একটি দামী সিসকো রাউটার নিজের জন্য ফ্রিতে পেতে চান- তাহলে লিনাক্স ইনস্টল করে ফেলুন আর নিজের জন্য রাউটার কনফিগার করে নিন।

আরেকটি কথা- এগুলি লিনাক্সে ফ্রি পাওয়া যায় যা আপনাকে টাকা দিয়ে কিনতে হতো। :v

মেইল তো সারাজীবন ইয়াহু/জিমেইল দিয়ে করেছেন। নিজের কোম্পানির জন্য এরকম সার্ভার তৈরী করতে হলে কি করবেন? আপনার ভিস্তা/সেভেন এগুলি কিন্তু পারে না। এজন্য মাইক্রোসফট আপনার কাছ থেকে আলাদা পয়সা নেবে ভাই। তার চেয়ে লিনাক্স দিয়ে করে ফেলুন। কোন খরচ হওয়ার ভয় নেই। :C

এবার আসুন সুপার কম্পিউটার এর কথা বলি। সুপার কম্পিউটার তৈরী হয় কিভাবে তা কি জানেন? অনেকগুলি সিপিইউ একসাথে দ্রুতগতির নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে যুক্ত হয়ে তৈরী হয় সুপার কম্পিউটার। :thumb: ঘরে বসে তৈরি করতে হলে ভিস্তা/সেভেন দিয়ে কিন্তু কিচ্ছু হবে না। :-((( মাইক্রোসফট এর কাছ থেকে আলাদা ও.এস. কিনুন অথবা লিনাক্স নিয়ে বসে যান পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাতে। চুপি চুপি একটি তথ্য- বিশ্বের প্রথম ৫০০ সুপার কম্পিউটার এর প্রায় ৯০% চলে লিনাক্সে। উইন্ডোজ এখানে লিনাক্সের ধারে কাছে ও নেই দেখে মন খারাপ হল নাকি? ভাই আপনার উইন্ডোজ ভাল হলে সুপার কম্পিউটার এর পরিসংখ্যান তো উল্টো হওয়ার কথা। আরও শুনে রাখুন- সুপার কম্পিউটার গুলিই আপনাকে আবহাওয়ার পরিসংখ্যান দেয়, মহাকাশে কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠায়, চাদে রকেট পাঠায়, বোয়িং বিমান তৈরী করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে- আরও কত কি যা বলে শেষ করা যাবে না স্বল্প পরিসরে।

তবে উপরের স্বল্প কথাগুলি থেকে ভাববেন না লিনাক্সে গেম খেলা, চিঠি লেখা বা হিসাব করার মত কাজ করা যায় না। লিনাক্সের ও রয়েছে বেশ কিছু চমৎকার প্রোগ্রাম যেমন- রাইটার, ক্যাল্ক, জিম্প।

1 comments:

Anonymous said...

ভাইজান ভিসন ভালো লাগলো আপনার লিখাটা পড়ে . আমি linux শিখতে ভিসন অগ্গ্রোহী. আশা করি আপনার কাছে থেকে আরো অনেক কিছু শিখব জানব.

Post a Comment