লিনাক্স পরিমন্ডলে রয়েছে তিন বৃহৎ শক্তি। বৃহৎ শক্তির ডিস্ট্রিবিউশন তিনটি সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ন এবং অন্য ডিস্ট্রোগুলির অধিকাংশই তাদের থেকে বিকশিত হয়েছে। কি কি বৈশিষ্ট্য তাদেরকে অনন্য করেছে এবং কিভাবে তারা লিনাক্স জগতকে একটি সুস্পষ্ট রূপ দান করেছে তা আমাদের আজকের আলোচ্য বিষয়।
লিনাক্সের ইকোসিস্টেম একটি জটিল বিষয়। একদিকে অন্যের সম্পাদন কৃত কাজ থেকে সবাই যেমন উপকৃত হচ্ছে তেমনি অন্যদিকে ডিস্ট্রিবিউশন এবং কমিউনিটি সমূহের মাঝে প্রায়ই বিদ্বেষ এবং দ্বন্ধ দেখা দেয়। অনেকে প্রায়ই অভিযোগ করে থাকেন লিনাক্স জগতে অতি বেশী মাত্রায় পছন্দ বিদ্যমান এবং যদি একটি বা দুটি থাকত তবে আমরা অনেক ভাল থাকতাম। তবে, কোনটিই মূল সত্য থেকে খুব বেশী দূরে নয়।
লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন সমূহের বহুমাত্রিকতার একটি সুস্পষ্ট কারন রয়েছে। তাদের অস্তিত্বের কারন হচ্ছে এ গ্রহে সবার প্রয়োজনকে মেটানো কোন একক ডিস্ট্রিবিউশনের পক্ষে সম্ভব নয়। বিভিন্ন মানুষ তাদের কাজ সম্পাদনে জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি পছন্দ করে থাকেন। শুধু তাই নয়, যে ডিস্ট্রিবিউশনটি সার্ভারের জন্য উপযুক্ত সেটি নিশ্চয়ই কোন ল্যাপটপের সাথে মানানসই হবে না। তাই হাজারো রকম ডিস্ট্রো আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে এক আশীর্বাদ স্বরূপ।
শুরুর কথা
অবশ্যই ব্যাপারটি শুরুতে এমন ছিল না। গানূহ এর যেমন একটি সূচনা রয়েছে, তেমনি রয়েছে লিনাক্সের এবং রয়েছে প্রথম ডিস্ট্রিবিউশনের ও একটি সূচনাকাল।
হ্যাঁ ঠিক, প্রথম অফিসিয়াল ডিস্ট্রিবিউশনটি ছিল এমসিসি ইনটেরিম(MCC Interim), যা ফেব্রুয়ারি ১৯৯২ তে প্রকাশিত হয়। এটিই ছিল প্রথম অফিসিয়াল ডিস্ট্রিবিউশন যা কোন কম্পিউটারে ইনস্টল করা যেত এবং লিনাক্স কার্নেল ও গানূহ ইউজারল্যান্ডসহ বের হয়। একই বছরে একটি নতুন এবং সে সময়কালের জনপ্রিয় একটি ডিস্ট্রিবিউশন তৈরী হয় যাকে আমরা সফটল্যান্ডিং লিনাক্স সিস্টেম বা সংক্ষেপে SLS হিসেবে জানি যেটি পরবর্তীকালে স্ল্যাকওয়ারের জন্ম দেয় যা প্যাট্রিক ভলকার্ডিং কর্তৃক তৈরী। বর্তমান পর্যন্ত স্ল্যাকওয়ার-ই হচ্ছে টিকে থাকা লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন সমূহের মধ্যে প্রাচীনতম।
স্ল্যাকওয়ার যে সময় বিকশিত হয় সে সময়টাতে প্রায় অর্ধ ডজন ডিস্ট্রিবিউশন বিদ্যমান ছিল। তবে কয়েকমাস পর, আগস্ট ১৬, ১৯৯৩ এ, সব থেকে গুরুত্বপূর্ন ডিস্ট্রোর একটি অস্তিত্বলাভ করে, যাকে আমরা আজও স্বাধীনভাবে উন্নয়নকৃত লিনাক্সসমূহের মধ্যে প্রাচীনতম ডিস্ট্রিবিশনের মুকটধারী বলে জানি। হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন - ডেবিয়ান। ডেবিয়ান পূর্বের করা কোন কাজের অংশবিশেষ/শাখা ছিল না, বরং আয়ান মারডক কর্তৃক তৈরীকৃত একটি স্বাধীন, নিজস্ব প্রজেক্ট ছিল। পুরোপুরি কমিউনিটি পরিচালিত ডেবিয়ান এখনো সব থেকে বৃহৎ অবানিজ্যিক লিনাক্স পরিবেশক হিসেবে বিদ্যমান।
ডেবিয়ানের জন্মের ঠিক এক বছর পর, ১৯৯৪ সালে তৃতীয় এবং চূড়ান্ত প্রভাব বিস্তারকারী সদস্য হিসেবে রেড হ্যাট লিনাক্সের দৃশ্যপটে আবির্ভাব। ডিস্ট্রিবিউশনটি মূলতঃ মার্ক ইউইং এর হাতে সৃষ্টি কিন্তু শীঘ্রই এটি বব ইয়াং এর কোম্পানি এসিসি কর্পোরেশনের সাথে একীভূত হয় যেটি রেড হ্যাটের জন্য আগে থেকেই সফটওয়্যার প্রস্তুত করে আসছিল। শুরু থেকেই রেড হ্যাট লিনাক্সকে কর্পোরেট ভুবনের কথা মাথায় রেখেই ডিজাইন করা হয়েছে। এটি লিনাক্সের একটি বানিজ্যিক বাস্তবায়ন ছিল এবং তা বর্তমানেও আছে এবং যেটি মুক্ত সফটওয়্যারকে কেন্দ্র করে নির্মিত।
জন্মলাভ করা
এ তিনটি ডিস্ট্রিবিউশন, যারা মহীরুহ স্বরূপ, একত্রে লিনাক্সের স্তম্ভ হিসেবে বিদ্যমান । ভিন্ন ভিন্ন টেকনোলজি এবং নতুন ধারা সৃষ্টির মাধ্যমে তারা প্রত্যেকেই একেকটি ধারার নেতৃত্ব প্রদান করে চলেছে যা আমাদের নিত্য সঙ্গী। লিনাক্সকে আজকের অবস্থানে নিয়ে আসার পিছনে তাদের রয়েছে এক সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়ার সুস্পষ্ট নিদর্শন।
শুধুমাত্র প্রাচীনতম হিসেবে টিকে থাকাই নয়, এর সাথে তারা প্রত্যেকেই এক একটি বৃহৎ গোষ্ঠীর অপারেটিং সিস্টেমের জন্মদাতাও বটে। অবশ্য এর পাশাপাশি কিছু গুরুত্বপূর্ন স্বাধীন ডিস্ট্রিবিউশন রয়েছে যেমনঃ আর্চ, ক্রাক্স, গেন্টু, লিনাক্স ফ্রম স্ক্রাচ, পাপ্পি, রক, টাইনি কোর, ইয়োপার এবং উল্লেখযোগ্য আরো কয়েকটি। তবে, এ লিংকের গানূহ/লিনাক্স ডিস্ট্রোর টাইমলাইন ছবি থেকে উপরোক্ত ডিস্ট্রো তিনটির প্রভাব সম্পর্কে সহজেই অনুমান করা যায়।
ডিস্ট্রোওয়াচের দেয়া তথ্য অনুযায়ী স্ল্যাকওয়ার থেকে ৬৬টি ডিস্ট্রিবিউশন তৈরী হয়েছে। রেড হ্যাট থেকে সরাসরি বিকশিত হয়েছে ৪০টির মত (অন্যদের উপর অথবা ফেডোরা থেকে হয়েছে ৮০টির কাছাকাছি), যেখানে মহিমান্বিত প্রপিতামহ ডেবিয়ান এর ক্ষেত্রে সংখ্যাটি ২৫০! চূড়ান্তভাবে ধরা যায় যে, আজকের দিনে প্রচলিত বেশীরভাগ লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন কোন না কোনভাবে এ মূল তিনটির উপর ভিত্তি করে তৈরী।
এ তিনটি ডিস্ট্রিবিউশনের মধ্যে সত্যিকারের পার্থক্য খুব বেশী নয়। অবশ্য তাদের মূল ভিত্তি একই; একটি লিনাক্স কার্নেল, গানূহ ইউজারল্যান্ড সাথে বিভিন্ন ডেস্কটপ এবং এ্যাপ্লিকেশনসমূহ। এ মিলসমূহের পাশাপাশি, ডিস্ট্রিবিউশনসমূহের মাঝে পার্থক্যটি কোথায়? এখন আমরা দেখব, এদের প্রত্যেকটিরই রয়েছে একক অনন্য কিছু বৈশিষ্ট্য যা বৈচিত্র্যতা কেন গুরুত্বপূর্ন তার যথার্থ প্রতিফলন!
স্ল্যাকওয়্যার - একক নেতৃত্ব
এক দিক থেকে বলা যায়, স্ল্যাকওয়ার পূর্বের মতই বর্তমানেও একক নেতৃত্বের এক সফল প্রদর্শন। প্যাট্রিক ভলকার্ডিং ডিস্ট্রিবিউশনটি তৈরী করেন এবং আজও তার নিয়ন্ত্রনে রয়েছে এটি। অবশ্য, তার পরিমন্ডলে রয়েছে একটি চমৎকার এবং নিবেদিত টীম কিন্তু তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি কোন লক্ষ্য নির্ধারন করে থাকেন।
ডিস্ট্রিবিউশনটি সহজ কেন্দ্রিক হওয়াকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে এবং যতদূর সম্ভব ইউনিক্সের সাথে সাদৃশ্য বজায় রেখে চলতে চেষ্টা করে। এটি প্যাকেজসমূহের জন্য বাড়তি প্যাচ দেয় না বরং এর মূল উৎসের সাথে সর্বোচ্চ মিল রেখে অবিকৃত অবস্থায় বাজারে ছাড়ে। স্ল্যাকওয়্যার ব্যবহারীর উপর বেশীরভাগ ক্ষমতা ছেড়ে দেয় এবং যতদূর সম্ভব কাস্টোমাইজেশনেক এড়িয়ে চলে। প্রথাগতভাবে এটি প্যাকেজ ম্যানেজারকে খুব বেশী ব্যবহার করে না এবং যদিও এটি প্যাকেজসমূহ ইনস্টল, আপগ্রেড এবং মুছে ফেলতে পারে তবে ডিপেনডেন্সি/নির্ভরতাকে ব্যবস্থাপনার আওতায় নিয়ে আসে না। এ ধরনের কাজকে সিস্টেম এ্যাডমিন বা ব্যবহারকারীর উপরই ছেড়ে দেয়া হয়, এবং এটিই স্ল্যাকওয়্যারের সাথে অন্য দুটি ডিস্ট্রোর মৌলিক পার্থক্য।
এ কারনে, এটিকে প্রায়ই ব্যবহারের জন্য কষ্টসাধ্য একটি ডিস্ট্রোরূপে বিবেচনা করা হয়, তবে এর ভক্তগন একে একটি শক্তিশালী এবং স্থিতিস্থাপক জরুরী টুলস হিসেবেই দেখে থাকেন। তা সত্বেও, কমিউনিটির মাঝে স্ল্যাকওয়্যার যথেষ্ট সমীহ আদায় করে নিয়েছে এবং এটি খুবই স্ট্যাবল/সুপ্রতিষ্ঠিত।
সম্প্রতি এটি ৬৪-বিট এবং ARM আর্কিটেকচারের জন্যও সাপোর্ট দিতে শুরু করেছে, কিন্তু এর পূর্বে এটি শুধুমাত্র ৩২-বিট এর প্রতিই বেশী মনোযোগী ছিল। এটি শুধুমাত্র একটি গুরুত্বপূর্ন ডেস্কটপ এনভারোনমেন্ট সাপোর্ট করে আর তা হল, কেডিই, যদিও অন্যান্য ডেস্কটপ যেমনঃ গানোম কমিউনিটি দ্বারা সাপোর্টেড।
যেখানে অন্যান্য নতুন ডিস্ট্রোসমূহ কোন বিষয়কে সহজ করার জন্য অতিরিক্ত স্তর বা লেয়ার যুক্ত করছে, সেখানে স্ল্যাকওয়ার এর ইউনিক্স ভিত্তিকে অটুট রেখে চলেছে যা একটি সহজ কিন্তু শক্তিশালী, উচ্চমানের কনফিগারেবল সিস্টেম প্রদান করে থাকে।
ডেবিয়ান- গর্বিত কমিউনিটি
ডেবিয়ানের রয়েছে এক সূদীর্ঘ গর্বিত ইতিহাস। এটি সারাবিশ্বের বিভিন্ন কমিউনিটির স্বেচ্ছাসেবক দ্বারা পরিচালিত, যেখানে রয়েছে এক হাজারের উপর উন্নয়নকারী যারা মুক্ত সফটওয়্যারের পক্ষ থেকে সর্বোৎকৃষ্ট অপারেটিং সিস্টেম প্রদানে সমন্বিত প্রয়াস অব্যাহত রেখেছে। ডেবিয়ান অনন্য/অদ্বিতীয় কারন এটি এর নিজস্ব গঠনতন্ত্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, যাকে সোশ্যাল কন্ট্রাক্ট বা সামাজিক চুক্তি বলে, যা মূলতঃ মুক্ত সফটওয়্যার এর গাইডলাইন এবং নীতির সমন্বয়। এজন্যই এর প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো এত মজবুত যেখানে একজন নির্বাচিত দলনেতা সহ সেক্রেটারি এবং টেকনিক্যাল টীম থাকে। নেতৃত্ব নির্বাচন প্রক্রিয়া বছরে একবার অনুষ্ঠিত হয়।
স্ল্যাকওয়ারের মত ডেবিয়ান নেতা সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী নন। প্রকৃতপক্ষে কোন সাধারন প্রস্তাবনার মাধ্যমে, ডেভেলপার বা উন্নয়নকারীগন কোন সিদ্ধান্ত বদলে দেয়া থেকে শুরু করে নেতৃত্ব অপসারন এমনকি গঠনতন্ত্র পর্যন্ত পরিবর্তন করতে পারেন। ডেভেলপারগন কোন গুরুত্বপূর্ন ইস্যুর উপর ভোট প্রদান করতে পারেন যা প্রজেক্টকে প্রভাবিত করে থাকে (যেমন কোন বাইনারি ফার্মওয়্যার অন্তর্ভুক্ত করা হবে কিনা)।
ডেবিয়ান তার নিজস্ব শক্তিশালী প্যাকেজ ব্যবস্থাপনার উপর ভিত্তি করে আবর্তিত হয় যার রয়েছে কতিপয় গুরুত্বপূর্ন উপাদান। এ সিস্টেমটি শুধুমাত্র সাধারন কাজ যেমন প্যাকেজ ইনস্টল -আনইনস্টলের কাজই করেই ক্ষান্ত হয় না বরং স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা ডিপেনডেন্সিকে ও সামলে থাকে। এটি শুরু থেকেই ডেবিয়ানের খুব গুরুত্বপূর্ন একটি অংশ যা একে অন্যান্য ডিস্ট্রিবিউশন থেকে স্বতন্ত্র মর্যাদা দিয়েছে। ডেবিয়ান তার বিখ্যাত .deb প্যাকেজ ফরম্যাট ব্যবহার করে থাকে যেটি স্ল্যাকওয়্যারের সাধারন টারবল বা রেডহ্যাটের আরপিএম থেকে পুরোপুরি ভিন্ন। বিভিন্ন দিক বিবেচনায় প্যাকেজ ব্যবস্থাপনাই হচ্ছে ডেবিয়ানের মূল চাবিকাঠি। সফটওয়্যার উন্নয়নের জন্য প্রজেক্টটির কঠোর নীতিমালা রয়েছে এবং আপগ্রেডের সময় এটি প্যাকেজসমূহের উপর সঠিকভাবে মনোযোগ নিবন্ধ করে যাতে একটি সঙ্গতিপূর্ন সিস্টেম নিশ্চিত করতে পারে। প্যাকেজসমূহ যাতে সঠিকভাবে প্রস্তুত হয় এবং নির্ভুলভাবে কাজ করে তার উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়।
ডেবিয়ানের সকল সংস্করনের নামকরন করা হয়েছে পিক্সার কোম্পানির ফিল্ম টয় স্টোরির চরিত্র সমূহের নাম থেকে। ডেবিয়ান তার প্রকাশনার মানের ব্যাপারে সর্বদাই আপোষহীন যদি ও তাতে কিছুটা সময় বেশী লাগে। প্রজেক্টটি মোট ৩টি প্রধান শাখা মেইনটেইন করে থাকে যথা- স্ট্যাবল বা সুপ্রতিষ্ঠিত, পরীক্ষামূলক বা টেস্টিং এবং পরিবর্তনশীল বা আনস্ট্যাবল (যাকে সিড নামে ডাকা হয়)। যদিও অফিসিয়াল ডেস্কটপ হচ্ছে গানোম, কিন্তু যত ধরনের উইন্ডো ম্যানেজার ও ডেস্কটপ আছে তার প্রায় সবই প্রজেক্টে সহায়তার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এটি স্ল্যাকওয়ার থেকে পুরোপুরি ভিন্ন যা অফিসিয়ালি মাত্র একটি ডেস্কটপ কেডিই কে সহায়তা দিয়ে থাকে।
এছাড়াও স্ল্যাকওয়ার এর মত কেবল এক/দুটি আর্কিটেকচার নয় বরং ১১টি ভিন্ন ভিন্ন আর্কিটেকচার সাপোর্ট করে ডেবিয়ান, যার সাথে আরো ৫টি নতুন আর্কিটেকচার অচিরেই যুক্ত হতে যাচ্ছে। এটি ২৫০০০ এর ও বেশী প্যাকেজসহ ছাড়া হয়েছে যা প্যাকেজ ব্যবস্থাপনা সিস্টেমের সহায়তায় সর্বদা ইনস্টলের জন্য প্রস্তুত। নির্ভরযোগ্য বৈশিষ্ট্য এবং বহু সংখ্যক আর্কিটেকচার সাপোর্টের জন্য ডেবিয়ান ব্যাপকভাবে ডেস্কটপ, সার্ভার এবং এম্বডেড সিস্টেমে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
যদি ডেবিয়ান প্রজেক্টের অর্জন হিসাব করেন তবে তা সত্যিই অতুলনীয়। এর দৃঢ় ভিত্তি এবং কাঠামো ডেবিয়ানের সাফল্যে গুরুত্বপূর্ন অবদান রেখেছে এবং উবুন্তুর মত অন্যান্য ডিস্ট্রিবিউশনের জন্য এক চমৎকার পছন্দের ভিত্তি তৈরী করেছে।
রেড হ্যাট- বানিজ্যিক উপস্থিতি
শুরু থেকেই রেড হ্যাট লিনাক্স লিনাক্সের একটি বানিজ্যিকীকরন হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। আজ ও পর্যন্ত সহায়তা সেবা প্রদান, প্রশিক্ষন এবং বিভিন্ন সেবা সমন্বিতকরনের মাধ্যমে এটি চমৎকার সাফল্য দেখিয়ে চলেছে। রেডহ্যাটের জনপ্রিয়তার একটি বড় কারন হচ্ছে কর্পোরেট পরিবেশে একটি সাপোর্টেড লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন হিসেবে এর ব্যাপক ব্যবহার। রেডহ্যাট লিনাক্সের উপর শত শত কোর্স চালু রয়েছে এবং বহুদিন যাবত রেডহ্যাটকে লিনাক্সের সমার্থক হিসেবে ভাবা হতো।
রেড হ্যাটের অফিসিয়াল কমার্শিয়াল ডিস্ট্রিবিশন - রেড হ্যাট এন্টারপ্রাইজ লিনাক্স (আরএইচইএল) এবং অন্যরা যেমন ফেডোরা এর মধ্যে পার্থক্যটা ফুটিয়ে তোলা জরুরী। RHEL কে রেডহ্যাটের কাছ থেকে কেনার সময় শুধুমাত্র বাইনারী ফর্মে পাওয়া যায় যা অন্য দু’ডিস্ট্রিবিউশনের তুলনায় ভিন্ন। তবে পুরো অপারেটিং সিস্টেমের সোর্স কোড উম্মুক্ত এবং এটি থেকে আরো বেশ কিছু ডিস্ট্রিবিউশন বিকশিত হয়েছে (যেমনঃ সেন্ট ওএস)।
RHEL এর বেশীরভাগ উন্নয়কাজ রেডহ্যাটের নিজস্ব কর্মচারীরাই করে থাকেন। রেডহ্যাটের উন্নয়ন প্রক্রিয়া রেড হ্যাটের কমিউনিটি পরিচালিত ডিস্ট্রিবিউশন ফেডোরা ভিত্তিক যা স্ল্যাকওয়ার বা ডেবিয়ান থেকে অনেকটাই ভিন্ন। যদিও একটি সুপ্রতিষ্ঠিত এবং আকর্ষনীয় ডিস্ট্রিবিউশন এর নিজস্ব স্বত্বাধিকার ভিত্তিক, অন্যদিকে ফেডোরা হচ্ছে নতুন টেকনোলজির জন্য একটি পরীক্ষা ক্ষেত্র যা পরবর্তীতে রেডহ্যাটের বানিজ্যিক ডিস্ট্রোতে স্থানান্তরিত হয়।
রেডহ্যাট ডেবিয়ানের তুলনায় একটু দেরীতেই পরিপূর্ন এবং সমন্বিত প্যাকেজ ব্যবস্থাপনা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। তবে এর মূল স্তরে প্যাকেজসমূহ আরপিএম ফরম্যাটকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত যেটি আবার বিভিন্ন ধরনের লো-লেভেল টুলস দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। আজকের দিনে ডেবিয়ানের মতই রেডহ্যাটে প্যাকেজ ইনস্টল করা সহজ বিষয়ে পরিনত হয়েছে যেখানে ডিপেনডেন্সীকে অনুসরনের পর্যাপ্ত সহায়তা বিদ্যমান এবং সেই সাথে এর আকর্ষনীয় ফিচারসমূহ মেশিনের সুদৃঢ় অবস্থা নিশ্চিত করে থাকে।
রেডহ্যাট বর্তমানে লিনাক্স কার্নেল এবং এক্স ডট অর্গ উভয় প্রজেক্টেই নেতৃত্ব স্থানীয় অবদানকারীদের একজন। এটি আরো গুরুত্বপূর্ন কিছু সফটওয়্যার এর নির্ভরযোগ্য উৎসস্থল যেগুলি আমরা আমাদের প্রাপ্য হিসেবে গ্রহন করেছি যেমনঃ ডি-বাস, হল, পলিসি কিট, নেটওয়ার্ক ম্যানেজার, পালস অডিও, লিবারেশন ফন্ট এবং আরো বহু কিছু যা এখানে উল্লেখ করা সত্যিই কঠিন।
রেডহ্যাট উম্মুক্ত সফটওয়্যারের এক বড় সমর্থক এবং তারা একটি প্যাটেন্ট নীতি প্রনয়ন করেছে যা উম্মুক্ত সফটওয়্যারের কল্যানে ব্যবহার করে থাকে। তাদের ব্যবসায়িক আদর্শ বড় ধরনের সাফল্য লাভ করেছে এবং উম্মুক্ত সফটওয়্যার থেকে কিভাবে অর্থ উপার্জন করা যেতে পারে তার গুরুত্বপূর্ন উদাহরন হিসেবে রেডহ্যাটকে প্রায়শই উপস্থাপন করা হয়ে থাকে।
উপসংহারে
সম্ভবত আপনি আগে কখনই উপলব্ধি করেননি লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন ইতিহাসের অনন্যতাকে অথবা এ ডিস্ট্রিবিউশসমূহ কিভাবে বিকশিত হয়েছে। তাই আশা করি এদের সমৃদ্ধ উত্তরাধিকার নিয়ে কিছুটা পরিচিতি তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে এ টপিক্স। এ ডিস্ট্রিবিশনগুলির অস্তিত্ব লিনাক্স জগতকে একটি সুস্পষ্ট অবয়ব দান করেছে তা সে প্যাকেজ ম্যানেজমেন্টই হোক, বা আধুনিক এ্যাপ্লিকেশন, সংস্কৃতি অথবা দর্শন যাই হোক না কেন যেমনটা আমরা বর্তমানে প্রত্যক্ষ করছি। প্রত্যেক ডিস্ট্রিবিউশনই আমাদের পছন্দের প্ল্যাটফরমের ধারাবাহিক সাফল্যের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রেখে চলেছে।
উল্লেখযোগ্য পার্থক্য সত্বেও এ তিন পরাশক্তি অতীতের মতই বর্তমানে ও বেশ জনপ্রিয়। এটি জানা ও বেশ উজ্জীবিত করে আমাদেরকে যে, যদিও বর্তমানে শত শত ডিস্ট্রো সক্রিয় রয়েছে কিন্তু তাদের কেউই এ তিন ডিস্ট্রোর অবস্থানকে স্থানচ্যূত করতে পারেনি। এটি সুষ্পষ্ট যে, শত পার্থক্য থাকা সত্বেও ডিস্ট্রো তিনটির আরো বহু কিছু প্রদানযোগ্য রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, তাদের পার্থক্যের কারনেই সম্ভবত তারা এখনও শক্তিশালী অবস্থান ধরে রেখেছে। এমন কোন একক জিনিস নেই যেটি কম্পিউটার বিশ্বে সবার জন্য প্রযোজ্য এবং আমরা এ বৈচিত্র্যতার উপস্থিতি যা পছন্দ করার স্বাধীনতা সহ বিদ্যমান তাকে স্বাগত জানাই।
এ তিনটি ডিস্ট্রিবিউশনের প্রতি কৃতজ্ঞতাসহ শেষ করছি যাদের জন্য আমাদের রয়েছে বহু বছর ধরে গড়ে ওঠা এক সমৃদ্ধ সংস্কৃতি এবং ইতিহাস।
টপিক্সের শিরোনাম দেখে আশা করি কিছুটা আচ করতে পারছেন। উন্নত বিশ্বে উইন্ডোজ চালিত পিসি থেকে ব্যবহারকারীরা অনলাইন ব্যাংকিং এর কাজ করতে কিছুটা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। আমাদের দেশে ও জোরেসোরে অনলাইন ব্যাংকিং ও নিরাপত্তামূলক সেবা প্রদান চালু হচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে ব্যাপারটি আমাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এইতো সেদিন ভারতীয় হ্যাকাররা আমাদের কয়েকটি জেলার ওয়েবসাইট অচল করে দিল। আমরা কিছুই করতে পারিনি। তাই এ ধরনের নিরাপত্তামূলক কাজে লিনাক্সের ব্যবহার নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে সারাবিশ্বে। যেমনঃ ফ্লোরিডার একটি আঞ্চলিক ব্যাংক -অরল্যান্ডো- এর সিইও তাদের কাস্টমার এবং ব্যবসায়ীদের জন্য উবুন্তু বেজড লাইভ ডিস্ট্রো প্রচলনের চিন্তাভাবনা করছে। এ ডিস্ট্রোর সাহায্যে যে কোন কম্পিউটার থেকেই মেশিন বুট করে ফায়ারফক্সের সাহায্যে গ্রাহক দ্বিধাহীন চিত্তে অনলাইন ব্যাংকিংয়ের কাজ সারতে পারবেন। আর লাইভ সিডিতে যেহেতু কোন ধরনের স্পাইওয়্যার, ম্যালওয়্যার থাকবে না তাই প্রতিবারই গ্রাহক একটি নিরাপত্তামূলক পরিবেশ পাবেন। বোনাস হিসেবে লিনাক্স ব্যবহারের অভিজ্ঞতা আর আগ্রহ বৃদ্ধির সুযোগ তো থাকছেই।
সিএনএল নামের আরেকটি ব্যাংক ও বলছে - যেহেতু কোন কাস্টোমারই অনলাইন ব্যাংকিংয়ের জন্য পৃথক একটি কম্পিউটার রাখতে চায় না তাই উবুন্তু লাইভ সিডিই হতে পারে সর্বোত্তম সমাধান। তাদের ভাষায়- The discs would boot up Linux, run Firefox and be configured to go directly to CNL Bank's Web site. "Everything you need to do will be sandboxed within that CD," অর্থাৎ ডিস্কটি বুট হয়ে ফায়ারফক্স চালু হয়ে যাবে এবং সরাসরি ব্যাংক সাইটে নিয়ে যাবে। আপনার যা কিছুই করার প্রয়োজন হবে সবই হবে সিডির পরীক্ষামূলক পরিবেশে।
সিডি চালু অবস্থায় যদি কোন এ্যাটাক হয়েও যায় সিডি বের করার সাথে সাথেই তা উধাও হয়ে যাবে অর্থাৎ পরের সেশনে তা আর ফিরে আসবে না উইন্ডোজের মত। তাই সার্বিক নিরাপত্তাটি অনেক বেশী পাওয়া যাবে। যদিও লাইভ সিডির গতি কম কিন্তু নিরাপত্তা পেতে হলে কিছু তো ছাড় দিতেই হবে।
এ ধরনের কাস্টোমাইজ সিডি প্রচলিত রয়েছে অনেক আগে থেকেই যেমনঃ সিস্টেম রেসকিউ সিডি, স্লিটাজ ইত্যাদি। এগুলির সাইজও অত্যন্ত ছোট এবং পেনড্রাইভেও ইনস্টল করে নেয়া যায়। আর unetbootin দিয়ে ইনস্টল করে নিলে সিডির মতই কাজ করবে অর্থাৎ আপনার সেশনে করা কোন পরিবর্তনই সেভ করবে না এসব ডিস্ট্রো। সিডির সুবিধা পেনড্রাইভ থেকেই পাওয়া যাবে।
তাই সামনে উইন্ডোজকে আমরা এ ক্ষেত্রে মনে হয় বেকায়দায় পড়তে দেখবে সারা বিশ্বে। কারন তাদের তো এত সুবিধা দেয়ার সামর্থ্য নেই। আর আমরা যারা আগে থেকেই লিনাক্সের এসব পদ্ধতির সাথে পরিচিত তারা নিশ্চয়ই অনলাইন ব্যাংকিংয়ের নিরাপত্তায় এগিয়ে থাকব। মূল সূত্রঃ অনলাইন