কার্নেল হল যে কোন অপারেটিং সিস্টেমের প্রান ভোমরা স্বরূপ। অপারেটিং সিস্টেমের বেসিক কাজ যেমনঃ ডিভাইস ড্রাইভার চালানো, ফাইল সিস্টেম (FAT, NTFS, EXT2) ম্যানেজমেন্ট, মেমোরী ম্যানেজমেন্ট, স্টোরেজ ডিভাইস ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি কাজের বেশীরভাগই কার্নেল লেভেলে হয়ে থাকে। কারন এ সমস্ত বেশীরভাগ কাজ প্রতিটি প্রোগ্রামেই দরকারী।
উদাহরনস্বরূপঃ আপনি যদি নোটপ্যাডে একটি ফাইল খুলে কিছু লেখেন তাহলে প্রথমে কার্নেল ফাইলটিকে ডিস্ক থেকে খুজে বের করবে, তারপর নোটপ্যাডকে ঐ লোকেশনটি প্রদান করে খুলতে সহায়তা করবে, তারপর যখন কিছু লিখবেন তখন কি-বোর্ড ড্রাইভার ও গ্রাফিকস কার্ডের ড্রাইভারকে নির্দেশ প্রদানের মাধ্যমে তা স্ক্রিনে আউটপুট প্রদান করবে। সবশেষে উক্ত লেখা সেভ করার সময় কার্নেল ডিস্ককে বলে দেবে কোথায় সেটি সেভ করবে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন যেকোন কাজের পেছনে কার্নেল এর ভূমিকা কত ব্যাপক। এ সমস্ত সাধারন কাজ যা প্রায় প্রতিটি প্রোগ্রামেই লাগে তা প্রতিটি প্রোগ্রামের সাথে জুড়ে দিলে এক একটি প্রোগ্রামের সাইজ কত হত তা একবার ভেবে দেখেছেন কি? তাই কার্নেল এর মাধ্যমে এ সমস্ত সাধারন কাজগুলিকে একটি জায়গা থেকেই মেইনটেইন করা হয়ে থাকে।
লিনাক্সের ক্ষেত্রে কার্নেলকে মেইনটেইন করেন খোদ এর স্রষ্টা লিনাস টোরভাল্ডস। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা প্রতিভাবান সব কার্নেল হ্যাকাররা লিনাসের নেতৃত্বে এক বিশাল কাজ পরিচালনা করে যাচ্ছেন। হ্যাকার নাম শুনে ঘাবড়াবেন না। লিনাক্স জগতে হ্যাকারদেরকে উইন্ডোজ জগতের মত ভীতির চোখে দেখা হয় না বরং সমীহ করে চলা হয়। কারন তারাই তো এ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। বিনা পারিশ্রমিকে লিনাক্সের খুটিনাটি বিষয়গুলি পরীক্ষা নিরীক্ষা করা, মেইনটেইন করা, বাগ ফিক্স করা, রিলিজ করা সব করে যাচ্ছেন নীরবে।
লিনাক্স কার্নেলে নতুন কিছু যোগ করা বা পরিমার্জন করা হলে হ্যাকাররা তা সম্পাদন করে লিনাসের কাছে জমা দিয়ে থাকেন। লিনাস সুবিধাজনক সময়ে সেটি আবার http://www.kernel.org/ সাইটে রিলিজ দিয়ে থাকেন। এখান থেকে যে কেউ কার্নেল ডাউনলোড করে তা কম্পাইল করে নিতে পারেন। কিন্তু শুনতে সহজ মনে হলেও কাজটি অত সহজ নয়। কার্নেল নামিয়ে কম্পাইল করতে গেলে মেশিনভেদে এটি ২/৪ ঘন্টা পর্যন্ত লাগতে পারে। এমনকি কম্পাইল এর মাঝে যদি পাওয়ার সমস্যা দেখা দেয় তাহলে সব কাজ ফিনিস। আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। তাই নতুন ব্যবহারকারীরা প্রায়ই কম্পাইল করতে গিয়ে হতাশ হয়ে পড়েন। কিন্তু কেন এই কার্নেল রিকম্পাইল করবেন?
কারন আর কিছুই না। যদি আপনার কোন ডিভাইস বর্তমান কার্নেল সাপোর্ট না করে যেমন গ্রাফিক্স কার্ড, সাউন্ড কার্ড, ইউএসবি এজ মডেম ইত্যাদি তাহলে নতুন কার্নেল এ থাকার সম্ভাবনা অনেক বেশী থাকে। তারপরও যদি না থাকে ফোরাম সার্চ করুন, গুগল করুন অথবা কার্নেল বাগ ডাটাবেজে এ রিপোর্ট করুন। তাহলে পৃথিবীর অপর প্রান্তের কেউ একজন এ বাগ ঠিক করে যখন নতুন কার্নেল রিলিজ করবে তখন তা মেশিনে ইনস্টল করে নিন। তাহলে আপনার সমস্যার সমাধান হয়ে ও যেতে পারে। এখানেই লিনাক্সের মূল শক্তি নিহিত। ওপেন সোর্স হওয়ায় আপনি সহজেই সাহায্য পাচ্ছেন। যা উইন্ডোজে মোটেই সম্ভব না। এছাড়াও কার্নেলে নতুন ফাইল সিস্টেম এর কোড, পুরাতন কার্নেল এর বাগ ফিক্সিং, মেশিন দ্রুতগতিসম্পন্ন করার জন্য টিউনিং কোড ইত্যাদি দেয়া হয়ে থাকে।
আপনার কার্নেল এর ভার্সন নম্বরটি জানতে লিনাক্সে ঢুকে শেল প্রম্পটে টাইপ করুন uname –a। এখানকার আউটপুটের যে অংশটি 2.6.xx.xx টাইপের সেটিই আপনার কার্নেল ভার্সন। ধরি আপনার বর্তমান কার্নেল নম্বর 2.6.26। এখন আপনি যদি নতুন কার্নেল 2.6.30 তে কার্নেল আপডেট করতে চান তাহলে আপনার জন্য উবুন্তু টিম রেডিমেড কম্পাইলড প্যাকেজ নিয়ে বসে আছে। আপনি শুধু ডাউনলোড করুন আর ইনস্টল করুন। ব্যস কেল্লা ফতে।
এ ফাইলগুলি আপনি এ লোকেশনে পাবেন- http://kernel.ubuntu.com/~kernel-ppa/mainline/
আপনার যে ভার্সন দরকার সে ভার্সনের ফোল্ডারে ক্লিক করুন আর নিচে উল্লেখিত ফাইলগুলি ডাউনলোড করুন।
যেমন ভার্সন ২.৬.৩০ এর লোকেশন হবে http://kernel.ubuntu.com/~kernel-ppa/mainline/v2.6.30/
ইনস্টলেশন পদ্ধতি
- প্রথমেই ডাউনলোড করুন
- এবার কার্নেল হেডার প্যাক ডাউনলোড করুনঃ
http://kernel.ubuntu.com/~kernel-ppa/ma ... 0_i386.deb
64 বিট মেশিনের (এএমডি/ইন্টেল উভয়ের) জন্যঃ
http://kernel.ubuntu.com/~kernel-ppa/ma ... _amd64.deb
- কম্পাইলড কার্নেল ইমেজ ডাউনলোড করুনঃ
http://kernel.ubuntu.com/~kernel-ppa/ma ... 0_i386.deb
64 বিট মেশিনের (এএমডি/ইন্টেল উভয়ের) জন্যঃ
http://kernel.ubuntu.com/~kernel-ppa/ma ... _amd64.deb
উপরে ঠিক যে ক্রমানুযায়ী ডাউনলোড করেছেন সেভাবেই এগুলিকে ইনস্টল করুন। অথবা সব ফাইলগুলিকে একটি ফোল্ডারে রেখে উক্ত ফোল্ডারে গিয়ে নিচের এক কমান্ডেই কাজ করুনঃ
dpkg –i *.deb
update-grub
আশা করি উপরের বর্নিত পদ্ধতি আপনাকে কার্নেল সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারনা দেবে। তবে আরও ভাল ধারনা পাওয়ার উপায় হলো মূল কার্নেল টার ফাইল নামিয়ে একটু নেড়ে চেড়ে দেখা (যদি সি ল্যাংগুয়েজ জানেন), তারপর কম্পাইল করা এবং ইনস্টল করা। তবে কথা আছে- যদি আপনার একটি খুব উন্নত ও দ্রুতগতির মেশিন থাকে তাহলে রিকম্পাইলের রিস্ক নিতে পারেন। আজ এ পর্যন্তই। ভাল থাকুন সবাই।
0 comments:
Post a Comment