ভাইরাসের (Virus) আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমরা সাধারণত এভিজি, নর্টন, ক্যাস্পার স্কাই (AVG, Norton, Kasper sky) প্রভৃতি অ্যান্টিভাইরাস (Anti-virus) ব্যবহার করে থাকি। এসব অ্যান্টিভাইরাসের উপকারিতার পাশাপাশি কিছু কিছু অপকারিতা এবং সীমাবদ্ধতাও আছে। যেমন নর্টনের কথা যদি ধরা হয়, এটা কম্পিউটারকে ভয়াবহ রকমের স্লো করে দেয়। এভিজি যদিও কম্পিউটারকে খুব বেশি স্লো করে না, কিন্তু এটা অনেক সময় অনেক নির্দোষ এক্সিকিউট্যাবল (*.exe) ফাইলকেও ভাইরাস সন্দেহে অযথা হয়রানি করে। এছাড়া যত শক্তিশালী অ্যান্টিভাইরাসই হোক না কেন, নিয়মিত আপডেটের বিরক্তিকর ঝামেলাটা না পোহালে কেউই নতুন ভাইরাসগুলোকে আটকাতে পারেনা। ফলে অ্যান্টিভাইরাস থাকা সত্ত্বেও কম্পিউটারের বারোটা বেজে যেতে পারে। আর সৌভাগ্যক্রমে ভাইরাস যদি আপনার বুট সেক্টরে (Boot Sector) আক্রমণ করে বসে, তাহলে তো কথাই নেই। উইন্ডোজ নতুন করে ইনস্টল করা ছাড়া আপনার সামনে আর কোন পথ খোলা থাকবে না।
এসব ক্ষেত্রে আপনি ডীপ ফ্রিজ (Deep Freeze) সফটওয়্যারটিকে অ্যান্টিভাইরাসের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। ডীপ ফ্রিজ হচ্ছে এমন একটি সফটওয়্যার, যা কম্পিউটারকে অনাকাংখিত পরিবর্তনের হাত থেকে রক্ষা করে। ব্যাপারটা এরকম যে, আপনি কোন একটি হার্ড ডিস্ক ড্রাইভকে ফ্রিজ করার সময় এতে যেসকল ফাইল-ফোল্ডার (File-Folder) থাকবে, বা এতে যেসকল সফটওয়্যার ইনস্টল করা থাকবে, একবার ফ্রিজ করার পর আপনি সেগুলো যতই পরিবর্তন করুন না কেন, কম্পিউটার রিস্টার্ট (Restart) করা মাত্রই সব আবার আগের মত হয়ে যাবে। এরফলে আপনি যদি আপনার রুট ড্রাইভটিকে (যে ড্রাইভে আপনি সফটওয়্যারটি ইনস্টল করবেন – সাধারণত C ডীপ ফ্রিজের সাহায্যে ফ্রিজ করে রাখেন, তাহলে কোন ভাইরাস যদি আপনার বুট সেক্টরেও আক্রমণ করে বসে, তবুও কম্পিউটার রিস্টার্ট করামাত্রই সব ভাইরাস সমূলে বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
কোন অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার না করে শুধু ডীপ ফ্রিজ ব্যবহার করলে অবশ্য আপনার ফ্রিজ না করা ড্রাইভগুলো অর্থাত্ D: বা E: ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। তবে সেটা রুট ড্রাইভ আক্রান্ত হওয়ার চেয়ে অনেক কম ক্ষতিকর। কারণ অন্যান্য ড্রাইভে ভাইরাসের আক্রমণে আপনার শুধু কিছু এক্সিকিউট্যাবল ফাইল (*.exe) তথা সফটওয়্যার এবং কিছু গেমস ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যার অধিকাংশই আপনি ইন্টারনেট অথবা সিডি থেকে রিকভার (Recover) করতে পারবেন। কিন্তু আপনি যদি ডীপ ফ্রিজ ব্যবহার করে আপনার রুট ড্রাইভটিকে ফ্রিজ করে রাখেন, তাহলে ঐ ড্রাইভে কোনভাবেই ভাইরাস আক্রমণ করতে পারবে না। ফলে আপনার বুট সেক্টর আক্রান্ত হওয়ারও কোন সম্ভাবনা থাকবে না এবং ফলে আপনাকে উইন্ডোজ নতুন করে ইনস্টল করার ঝামেলাও পোহাতে হবে না।
ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজে উইন্ডোজ ইনস্টল করাকে ভীষণ ভয় পাই। কারণ উইন্ডোজের সাথে সাথে আমাকে প্রায় 50-60 টা প্রোগ্রাম ইনস্টল করতে হয় যেগুলো আমি নিয়মিত ব্যবহার করি। অথচ এভিজি ব্যবহার করা সত্ত্বেও এই বিরক্তিকর সময়সাপেক্ষ কাজটা আমাকে প্রতি কয়েক মাস পরপরই বাধ্য হয়ে করতে হতো। কিন্তু ডীপ ফ্রিজ ব্যবহার শুরু করার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় আড়াই বছর হতে চলল, এখনও একবারও উইন্ডোজ ইনস্টল করতে হয়নি। এর মাঝে একবারও যে ভাইরাস আক্রমণ করেনি, তা নয়। যতবারই ভাইরাসের আগমন টের পেয়েছি, রিস্টার্ট করা মাত্রই সব আবার ফ্রেশ; কোন রকম অ্যান্টিভাইরাস ছাড়াই। শুধু একবার ফ্রিজ না করা D: ড্রাইভে ভাইরাসের আক্রমণে কিছু ফ্ল্যাশ গেমস (Flash Games) নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, যার প্রায় সবগুলোই পরে ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে নিতে পেরেছি। কাজেই আমার নিজের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য অ্যান্টিভাইরাস হিসেবে এভিজি অথবা নর্টন অপেক্ষা ডীপ ফ্রিজ অনেক ভালো।
ডীপ ফ্রিজ সফটওয়্যারটা ইনস্টল এবং ব্যবহার করা খুবই সহজ। এর নতুন সংস্করণগুলোতে কিছু জটিলতা থাকলেও পুরানো সংস্করণগুলো খুবই সিম্পল। এখানে আমি ডীপ ফ্রিজ 5.70 ভার্সনটা আপনাদের জন্য আপলোড করে দিলাম। এর সাইজ মাত্র 2.35 মেগাবাইট। এটি ইনস্টল করার সময় আপনাকে ঠিক করে দিতে হবে আপনি কোন কোন ড্রাইভ ফ্রিজ করে রাখতে চান। সেক্ষেত্রে আপনাকে শুধু আপনার রুট ড্রাইভের (যে ড্রাইভে আপনি সফটওয়্যারটি ইনস্টল করবেন – সাধারণত C আইকনের পাশের চেকবক্সে টিকমার্ক দিতে হবে। আপনি যদি ভুলক্রমে D: বা E: এর পাশে টিকমার্ক দেন, তাহলে ঐ ড্রাইভগুলোও ফ্রিজ হয়ে যাবে এবং এরফলে আপনি ঐ সব ড্রাইভে কোন কিছু পরিবর্তন করতে পারবেন না।
ডীপ ফ্রিজ সফটওয়্যারটি ব্যবহার করে আপনি ইচ্ছে করলে যেকোন সফটওয়্যারের ট্রায়াল ভার্স থেকে প্রায় ফুল ভার্সনের সুবিধা আদায় করে নিতে পারেন। বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন এই লিংকে।